বরিশালে নদী-খাল দখলের প্রভাবে হুমকির মুখে পড়েছে কৃষি উৎপাদন
আপডেট সময় :
২০২৫-০১-২৯ ১৮:৩৯:৪০
বরিশালে নদী-খাল দখলের প্রভাবে হুমকির মুখে পড়েছে কৃষি উৎপাদন
কে এম সোয়েব জুয়েল, বরিশাল
অবৈধ দখল আর দূষণে ভরাট হয়ে যাচ্ছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার নদী-খাল। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জীববৈচিত্র্যের ওপর। পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে কৃষি কাজ।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, পালরদী নদী, উপজেলা সদরের গয়নাঘাটা-চাঁদশি, গৌরনদী বন্দর আশোকাঠী, দক্ষিণ পালরদী, মাহিলাড়া, বাটাজোড়, চন্দ্রহার, সাকোকাঠি মিশুক স্টান্ড, আগরপুর বন্দর, সরিকল, নলচিড়া গরঙ্গল, ভুরঘাটা-টরকী চেংগুটিয়া-রামসিদ্ধি, বার্থী, খাঞ্জাপুরসহ প্রায় সব খালের উভয় তীর দখল করে প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছেন ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ নানা অবৈধ স্থাপনা। আবার অনেক জায়গায় ময়লা-আবর্জনা ফেলে কৌশলে দখল করে নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে এক সময়ের খরস্রোতা টরকী বন্দরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত দুটি খাল। অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্ম্য আর নাব্য সংকটের কারণে চরম হুমকিতে রয়েছে আড়িয়াল খাঁর শাখা পালরদী নদী।
বাটাজোর সরিকল খাল দখলের কারনে একদিকে পনির অভাবে কৃষি কাজ ব্যাহত হচ্ছে অন্যদিকে এ খালটির উপর চলছে দখলের মহাউৎসব। বাটাজোর,চন্দ্রহার এবং সাকোকাঠি মিশুক স্টান্ড,আগরপুর স্টিল ব্রিজ থেকে বন্দর ও বন্দরের উত্তর পাশের খাল সম্পুর্ন অবৈদভাবে এবং খালের পাড় দখল করে দোকান পাট,মার্কেট, খালের ভিতর শৌচাগারের পাকা সেপটি টাংকি, মসজিদ নির্মান করার ফলে খালের জোয়ার ভাটার পাশাপাশী খাল গুলোর অস্তিত্ব যেমনি আজ হুমকির মুখে পড়েছে তেমনি হচ্ছে পরিবেশ দুষুন। এ সব অবৈধ স্থাপনার উচ্ছেদে পানি উন্নয়ন বোর্ড পাউবোর ভুমিকা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ উপজেলায় ৩৩টি খাল ও একটি নদী রয়েছে। কাগজে-কলমে খালের অস্তিত্ব থাকলেও অবৈধ দখলদারদের কারণে অনেক খাল অস্তিত্ব হারানো পথে। একমাত্র শাখা নদীটি রয়েছে নাব্য সংকটে। যে কারণে শীত মৌসুমে নদী পথে নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
টরকী বন্দরের একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, বন্দরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত দুটি খালে এক সময়ে নৌকায় পণ্য পরিবহন করা হতো। নানাবিধ কারণে সেই খাল ভরাট হয়ে গেছে। টরকী বন্দর ঘেঁষা পালরদী নদী শুকিয়ে গেছে। অথচ এই নদী পথে মাদারীপুর, মুলাদী ও স্বরুপকাঠীসহ বিভিন্ন এলাকায় নৌ-পথে বাণিজ্য করে থাকে টরকী বন্দরের ব্যবসায়ীরা। পরিকল্পিতভাবে নদী ও খাল খননের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
চাঁদশী এলাকার একাধিক কৃষক জানান, উপজেলা সদরের গয়নাঘাটা-চাঁদশী খাল এ এলাকার কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল। জনগুরুত্বপূর্ণ সেই খালের মুখ দীর্ঘদিন যাবত আটকে আছে। প্রাকৃতিক উপায়ে খালে পানি ঢুকতে পারছে না।
এ ছাড়া খালের দুপাশে অবৈধ দখলদারদের কারণে সরু হয়ে গেছে প্রশস্ত খালটি। এ ছাড়া উপজেলার অন্যান্য খালগুলো দীর্ঘদিন যাবত খনন না করায় শীত মৌসুমে শুকিয়ে থাকে। যার প্রভাব পড়ছে কৃষিতে। যার কারনে এ সকল এলাকার খালের তীরবর্তী মানুষের হাজার হাজার একর জমিতে সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে ইরি ধান উৎপাদন করতে ব্যাহত হচ্ছে। এ ছারাও জীববৈচিত্র্যের পাশাপাশি দেশীয় মাছের আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে গেছে।
তাই স্হানীয় সচেতন মহলের একটাই দাবি শহিদ রাষ্ট্র পতি জিয়াউর রহমানের খাল খননের কর্মসুচির ধারাবাহিকতাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করে খাল গুলি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ওই সকল দখল বাজদের গড়ে তোলা অবৈধ স্হাপনা গুলো অতি দ্রুত গুড়িয়ে দিয়ে খালের জৌলুস ফিরিয়ে এনে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সহ ওই সকল এলাকার খেটে খাওয়া মানুষেরা যাতে ইরি উৎপাদন করে নিজরা সাবলম্বি সহ দেশের দারিদ্র্য ও ক্ষুধা বিমোচনের লক্ষে কাজ করে যেতে পারে সে লক্ষ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।
এ বিষয় নির্বাহী প্রকৌশলী পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশাল মোঃ জাবেদ ইকবাল জানান, নদী-খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মানকারী দখলদারদের দ্রুত উচ্ছেদে ব্যবস্থায় প্রাথমিক ভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড মন্ত্রনালয় ৬ শত অবৈধ স্হাপনা উচ্ছেদের খরচের জন্য চাহিদা পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin
কমেন্ট বক্স